মেকআপ রিমুভার যে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা সব নারীরাই জানেন। মেকআপ না তোলা এবং ঠিক মতো মেকআপ না তোলার ফলাফল পুরোটাই ভোগ করতে হয় আমাদের ত্বকের। ঠিকমতো মেকআপ না তুললে শুরু হয় ব্রনের সমস্যা। এমনকি বয়সের আগেই ত্বক বুরিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে মেকআপ না তুললে। তাই মেকআপ তোলাটা এবং ভালো করে তোলাটা অনেক বেশি জরুরী।আপনি মার্কেট থেকে যে সব মেকআপ রিমুভার কিনে থাকেন তার বেশিভাগই থাকে নানা কেমিকেলে ভরপুর। সেসকল মেকআপ রিমুভার নিয়মিত ব্যবহার করলে হিতে বিপরীত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তাই আজ আপনাদের জন্য রইল সম্পূর্ণ নিরাপদে মেকআপ তোলার জন্য প্রাকৃতিক মেকআপ রিমুভার তৈরির পদ্ধতি।
দুধ এবং শসার মেকআপ রিমুভার
দুধ আমাদের ত্বকের জন্য অনেক ভালো একটি খাদ্য উপাদান। এই দুধ ব্যবহার করে অনায়াসে আমরা আমাদের মেকআপ রিমুভার বানিয়ে ফেলতে পারি
৪/৫ চা চমচ গুঁড়ো দুধ এবং ৩/৪ চা চামচ শসার রস একসাথে মিশিয়ে নিন। এতে প্রয়োজন মতো গরম পানি দিয়ে তরল পেস্টের মতো তৈরি করুন। এরপর একটি ব্রাশের সাহায্যে এই মিশ্রণটি মুখে লাগান। ১০ মিনিট পর মুখ ঠাণ্ডা পানি দিয়ে আলতো ঘষে ধুয়ে ফেলুন। এতে মেকআপ উঠে যাবে এবং ত্বকও উজ্জ্বল হবে।
ময়দা এবং টকদইয়ের মেকআপ রিমুভার
১ টেবিল চামচ ময়দা, ১ চিমটি হলুদ গুঁড়ো এবং প্রয়োজনমতো টকদই একটি বাটিতে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে মুখ ২/৩ মিনিট ম্যাসাজ করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। মেকআপ ত্বকের গভীর থেকে দূর হওয়ার পাশাপাশি ত্বক থাকবে সুস্থ।
মেঘ
মেছতার দাগ নিয়ে অনেকেই বিপদে পরেন। মুখে কালো বা বাদামী রঙের ছোপ ছোপ দাগের কারণে দেখতেও ভালো লাগে না। মেছতার দাগ নারীদের মধ্যেই বেশি চোখে পড়ে। মেছতার জন্য আধুনিকভাবে বেশ কয়েকটি চিকিৎসা রয়েছে। কিন্তু সব চাইতে ভালো হয় মেছতার দাগ যদি প্রাকৃতিক উপায়ে দূর করা যায়। চলুন তবে দেখে নেয়া যাক প্রাকৃতিক উপায়ে মেছতার দাগ দূর করার পদ্ধতিগুলো।মধু ও টকদই
একটি বাতিতে ২/৩ টেবিল চামচ মধু নিয়ে এতে দিন ১/২ টেবিল চামচ টক দই। খুব ভালো করে মিশিয়ে পেস্টের মত তৈরি করে ত্বকে লাগান। ৩০ মিনিট ত্বকে রেখে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ঘষে তুলে ফেলুন। নিয়মিত ব্যাবহারে মেছতার দাগ থেকে মুক্তি পাবেন।
লাউ
এক টুকরো লাউ নিয়ে চুলার আগুনে হাল্কা করে পুড়ে নিন। এই পোড়া লাউ মেছতার দাগের ওপর ঘসুন ভালো করে। প্রতিদিন এই পদ্ধতিটি পালন করুন। দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই মেছতার দাগ থেকে রেহাই পাবেন।
দারুচিনি ও দুধ
এক চিমটি দারুচিনি গুড়ো এবং সামান্য দুধের সর হাতের তালুতে আঙুল নিয়ে ভালো করে মেশান। এরপর এই মিশ্রণটি মেছতার দাগের ওপর লাগান। শুকিয়ে এলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে আলতো ঘষে তুলে ফেলুন। প্রতিদিন ব্যবহারে দ্রুত ফল পাবেন।
মধু ও অর্জুন গাছের ছাল
অর্জুন গাছের ছাল জোগার করে রোদে শুকিয়ে গুড়ো করে নিন। প্রতিদিন ১ চা চামচ এই গুড়োতে পরিমাণ মত মধু মিশিয়ে পেস্টের মত তৈরি করে মেছতার দাগের ওপর লাগান। ৩০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন ব্যবহারে ভালো ও দ্রুত ফল পাবেন।
মেঘ
সুস্থ সুন্দর ত্বক আমাদের সকলেরই কাম্য। সুন্দর ত্বক আমাদের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে। আমরা প্রত্যেকেই চাই আমাদের দেখতে আকর্ষণীয় লাগুক। এর জন্য আমরা অনেকেই অনেক কিছু করে থাকি। কিন্তু সব সময় ত্বকের সব সমস্যার সমাধান হাতের কাছে পাওয়া যায় না। কিন্তু ঘরোয়া ভাবে অনেক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। তাই আজকে আপনাদের জন্য রইল ত্বকের ৪ টি সমস্যার ঘরোয়া সমাধান।
মুখের ত্বকে তাৎক্ষণিক লাবণ্য
দিন শেষে বাসায় ফিরে মুখের দিকে তাকালে সন্ধ্যার বা রাতের কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার ইচ্ছেটাই উবে যায়। তখন দরকার মুখের ত্বকের তাৎক্ষণিক লাবণ্য ফিরিয়ে আনা। এর জন্য রয়েছে একটি ভেষজ সমাধান। আধা চা চামচ লেবুর রস, ১ চা চামচ মধুর সাথে মিশিয়ে মুখে ও গলায় লাগিয়ে নিন ভালো করে। ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন মুখে এসেছে তাৎক্ষণিক লাবণ্য।
হাত ও পায়ের ত্বকের কালো ছোপ ও রুক্ষতা
এই সময়ে সারাদিন ঘোরাঘুরিতে সব চাইতে বেশি ক্ষতি হয় হাত এবং পায়ের। রুক্ষ হয়ে যায় হাত পায়ের ত্বক। কালো ছোপ পড়ে কড়া রোদের জন্য। এইসময় হাত পায়ের সৌন্দর্য ধরে রাখতে হলে হাত ও পায়ের ত্বকে আপেলের খোসা ঘষে নিন নিয়মিত। এতে হাত ও পায়ের ত্বকের রুক্ষতা এবং কালো ছোপ দূর হবে।
মুখে বাদামী ছোপ পড়লে
অনেকের মুখের ত্বকে বাদামী ছোপ ছোপ দাগ পড়ে। অনেকে একে মেছতা বলে ভুল করেন। কিন্তু আসলে এটি মেছতা নয়। এই ছোপ ছোপ দাগ দূর করতে পাকা পেঁপে চটকে মুখে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
মুখের ত্বকের দাগ দূর করতে
মুখে অনেক সময় নানা কারণে দাগ পড়ে। ব্রণের দাগ, পোড়া দাগ, কিংবা লালচে কিছু দাগ। এই সমস্যার সমাধান করতে। সমপরিমান তুলসী পাতার রস ও লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে দুই বেলা নিয়মিত মুখে লাগান। দ্রুত যে কোন দাগ মিলিয়ে যাবে।
মেঘ
যাদের রাত্রি জাগার অভ্যাস রয়েছে এবং অনিদ্রা রয়েছে তাদের চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল হয়। এছাড়াও সব চাইতে সমস্যা হয় চোখের নিচের চামড়া কুঁচকে গেলে। যারা কম ঘুমান তাদের চোখের নিচের ত্বক কুঁচকে যায়। এতে দেখতে বিশ্রী লাগে এবং অল্প বয়সেই বয়স্ক মনে হয়। তাই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে চোখের নিচে এবং চারপাশে আন্ডার-আই সেরাম লাগানো উচিৎ। এতে ত্বক কুঁচকে যাওয়ার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাবেন। আন্ডার আই সেরাম বাজারে পাওয়া যায়। তবে প্রাকৃতিক উপায়ে খুব সহজেই ঘরে তৈরি করে নিতে পারবেন এই প্রসাধনটি। এতে করে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় থেকেও রেহাই পাবেন।
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- নারকেল তেল
- ভিটামিন ই ক্যাপস্যুল
পদ্ধতিঃ
- প্রথমে ২/৩ টেবিল চামচ নারকেল তেল একটি পরিষ্কার পাত্রে ঢেলে নিন।
- এরপর ভিটামিন ই ক্যাপস্যুল একটি সুঁই দিয়ে ছিদ্র করে ভেতরের তেল নারকেল তেলে দিয়ে দিন।
- এই দুটি তেল একসাথে একটি পরিষ্কার চামচ দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। খুব ভালো করে মেশাবেন যাতে আলাদা তেল মনে না হয়।
- এরপর এটি একটি পরিষ্কার কৌটোয় ভালো করে মুখ বন্ধ করে ফ্রিজে রেখে তেল জমাট বাঁধিয়ে ফেলুন।
- প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে ত্বক পরিষ্কার করে, ফ্রিজ থেকে এই সেরামটি বের করে পরিষ্কার আঙুলের মাধ্যমে চোখের চারপাশে লাগিয়ে ঘুমাবেন। ব্যস, চোখের নিচের চামড়া কুঁচকে যাওয়ার ঝামেলা থেকে সহজেই রেহাই পাবেন।
মেঘ
বহুকাল ধরেই নিজের চোখ জোড়াকে আকর্ষণীয় করে তুলতে নারীরা নানান প্রসাধনী ব্যবহার করেছেন। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে মিসরের অভিজাত নারীরা চোখের সৌন্দর্য বাড়াতে ও চোখ ভালো রাখতে সুরমা ব্যবহার করতেন। এরপর ধীরে ধীরে চোখের মেকআপে নতুন মাত্রা যোগ করে কাজল, আইলাইনার, আইশ্যাডো, মাসকারা ইত্যাদি। এরপর সেগুলোতেও নতুনত্ব আনার জন্য নানান রঙের কাজল ও মাসকারার ব্যবহার শুরু হয়।
চোখ দুটোকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে এবং চোখের পাপড়িকে ঘন ও লম্বা দেখাতে ব্যবহার করা হয় মাসকারা। দোকানে কালো ও নীল রঙের মাসকারা পাওয়া গেলেও সচরাচর আমরা কালো মাসকারাটাই বেছে নেই চোখের জন্য। অন্য কোনো রঙের মাসকারা ব্যবহার করলে কেমন দেখাবে সেই ভয়ে কখনই ব্যবহার করা হয় না নীল মাসকারা।
চোখের সাজে ড্রামাটিক লুক নিয়ে আসতে ব্যবহার করতে পারেন নীল মাসকারা। মেকআপের একঘেয়েমি নিমিষেই কাটিয়ে দিতে নীল মাসকারার বিকল্প নেই। আসুন জেনে নেয়া যাক নীল মাসকারায় নিজেকে সাজিয়ে তোলার কিছু টিপস।
মাসকারা দেয়ার আগে চোখে লেন্স পরতে চাইলে পরে নিন। নীল মাসকারার সাথে নীল, একুয়া ও হ্যাজেল রঙ এর লেন্স বেশ মানিয়ে যায়।
চোখের পাপড়িতে নীল মাসাকারা ব্যবহারের জন্য চোখের উপর ভালো করে বেজ মেকআপ দিয়ে নিন। কনসিলার দিয়ে চোখের নিচের কালি ঢেকে ফেলুন। তাহলে চোখটাকে দেখাবে অনেক বেশি প্রানবন্ত ও উজ্জ্বল।
চোখের পাপড়িতে নীল মাসকারা ব্যবহারের আগে আইশ্যাডো দেয়ার কাজ সেরে নিন। নাহলে আই শ্যাডো মাসকারায় লেগে যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে ন্যুড আইশ্যাডো দেয়াই ভালো। গাঢ় রঙ এর আইশ্যাডোর সাথে নীল মাসকারা একেবারেই মানায় না।
চোখের পাপড়িতে প্রথমে এক কোট কালো মাসকারা দিয়ে শুকিয়ে নিন। এরপর চোখের পাপড়িতে উপরে ও নিচে দুই তিন কোট নীল মাসকারা লাগিয়ে নিন।
মাসকারা ভালো করে শুকিয়ে গেলে চোখের কোলে নীল অথবা সাদা কাজল লাগিয়ে নিন।
মেঘ
মানসিক চাপ, বড় অসুখের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, মাথার ত্বকে চর্মরোগ, বংশগতির কারণেও চুল পড়ে। তবে চুল পড়া কমাতে প্রধানত চুলে পুষ্টি জোগাতে হবে। সে জন্য তেল-মসলাযুক্ত খাবার, চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে এবং মানসিক চাপ কমাতে হবে। এ ছাড়া সময়মতো খাওয়া-ঘুমানো ও পানি পরিমাণমতো পান করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, শ্যাম্পু করার সময় যেন নখের আঁচড় মাথার ত্বকে না লাগে।
আরেকটি বিষয় হলো, চুল পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা গজিয়ে যায়। সে কারণে এটি নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তার কিছু নেই। খুশকি দূর না হলেও চুল পড়ে। খুশকি থাকলে সপ্তাহে দুই দিন খুশকি প্রতিরোধী শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। অন্যান্য দিন প্রোটিন, অ্যামাইনো প্রোটিন সমৃদ্ধ শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এর ফলে চুলের গোড়া শক্ত হয়। নিয়মিত জলপাই তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে জেল ও চুলের স্প্রে কম ব্যবহার করাই ভালো। এতে চুলের ক্ষতি কম হয়। আসল কথা হলো, চুলকে পরিষ্কার রাখতে হবে। তবেই দেখবেন চুল পড়া কমে গেছে।
মেঘ