সুন্দর,ঘন ও লম্বা চুল সবারই কাম্য। একজন নারীর সুন্দর, লম্বা ও ঘন চুল যে কারো মনে ছাপ ফেলতে বাধ্য। কিন্তু ইদানিং আবহাওয়া ও আরও নানান কারনে চুলকে লম্বা ও ঘন করতে পারেন না অনেকেই, যদিও মনে মনে ঠিকই কামনা করেন। আবার লম্বা ঘন চুল পেতে অনেকেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে তাঁর ঘরেই রয়েছে চুলকে লম্বা ঘন ও সুন্দর করে তোলার ঔষধ। ঘরোয়া পদ্ধতিতে খাবারের মাধ্যমে চুলের যত্ন সেই প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। মিশরীয়, গ্রীক ও রোমানরা নিজেদের ঘরেই খুঁজে নিতেন চুলের সমস্যার সমাধান। তাই আজকে আপনাদের জন্য রইল ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলকে লম্বা, ঘন ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল করার ৪টি পদ্ধতি ঘরে মজুদ ৪টি খাদ্য উপাদানের মাধ্যমে। জেনে নিন কোন কোন খাবার কী পদ্ধতিতে আপনার চুলকে করবে লম্বা, ঘন ও স্বাস্থ্যউজ্জ্বল।
সবুজ চা (গ্রিন টি)
গ্রিন টির স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে সবাই খুব ভালো করেই জানেন। আজকে জেনে নিন গ্রিন টি ব্যবহারে কি করে স্বাস্থ্যউজ্জ্বল চুল পাওয়া যায়। গ্রিন টির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানসমূহ ত্বকের জন্য যতটা কার্যকরী চুলের জন্য ঠিক ততোটাই উপকারী। গ্রিন টি চুলের আগা ফাটা রোধ করে যার ফলে চুল লম্বা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এছাড়াও গ্রিন টি চুল পড়া রোধ ও নতুন চুল গজানোতে সহায়তা করে।
পদ্ধতিঃ
গ্রিন টি কম বেশি সবাই বানাতে জানি। বাজারে গ্রিন টি পাওয়া যায়। প্রথমে গ্রিন টি বানিয়ে নেবেন। অনেকেই গ্রিন টিতে মধু বা চিনি দিয়ে থাকেন। কিন্তু চুলে ব্যবহারের জন্য গ্রিন টি তে চিনি বা মধু দেবেন না। এক কাপ পরিমাণ গ্রিন টি নিয়ে হালকা গরম থাকতেই পুরো চুলে লাগিয়ে নিন। চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগাবেন। ১ ঘণ্টা চুলে লাগিয়ে রাখুন। তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
ডিম
স্বাস্থ্য উজ্জল চুলের জন্য ডিমের ব্যাহারটিও বেশ প্রাচীন। ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা চুল পড়া রোধ করে। এছাড়া ডিমে আরও রয়েছে সালফার, জিংক, আয়রন, সেলেনিয়াম, ফসফরাস ও আয়োডিন যা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে চুলের ঘনত্ব বাড়ায়।
পদ্ধতিঃ
প্রথমে একটি বাটিতে একটি ডিমের সাদা অংশ নিন। এতে ১ চা চামচ অলিভ অয়েল(জলপাই তেল) ও ১ চা চামচ মধু নিন( চুলের দৈর্ঘ্য ও পরিমাণ অনুযায়ী অলিভ অয়েল ও মধুর পরিমাণ বাড়াতে পারেন)। তারপর উপকরণগুলো খুব ভালো করে মেশান। যখন এটি মসৃণ পেস্টের আকার ধারন করবে তখন এত ব্যবহার উপযোগী হবে। মসৃণ পেস্টের মত হয়ে গেলে মাথার ত্বকে আলতো ঘষে মিশ্রণটি লাগিয়ে ফেলুন। ২০ মিনিট পর প্রথমে ঠাণ্ডা পানি ও পরে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত ১ বার এটি ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। ভালো ফল পাবেন।
আলু
আলুর ত্বকের ও অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রের গুণাবলী সম্পর্কে অনেকেই জানলেও আলু চুলের জন্য কতোটা উপকারী তা অনেকেই জানেন না। আলুর হচ্ছে টাকের সমস্যা দূর করার জাদুকরী উপাদান। আলুর ভিটামিন বি৬ টাক পরা রোধে কাজ করে। এছাড়াও আলুর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ম্যাংগানিজ ও ফাইবার যা নতুন চুল গজানো, চুলের অকালপক্বতা রোধ ইত্যাদির জন্য কাজ করে।
পদ্ধতিঃ
একটি মাঝারি আকৃতির আলু ঝুরি করে চিপে এর থেকে রস বের করে নিন। এরপর একটি বাটিতে আলুর রস, একটি ডিমের সাদা অংশ ও ১ চা চামচ মধু খুব ভালো করে মেশান। খুব ভালো করে মিশে গেলে, মিশ্রণটি চুলের গোঁড়ায় আলতো ঘষে লাগিয়ে নিন। এভাবে ২ ঘণ্টা রেখে দিন। ২ ঘণ্টা পর একটি মৃদু শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভালো ভাবে ধুয়ে নিন।
পিঁয়াজ
ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের বৃদ্ধির সবচাইতে পুরনো ও প্রাচীন পদ্ধতির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পিঁয়াজের ব্যবহার। পিঁয়াজ সালফারের একটি বেশ ভালো উৎস। পিঁয়াজের রসের সালফার মাথার ত্বকের কোলাজেন টিস্যু উৎপাদনে সহায়তা করে। ফলে নতুন চুল গজায়।
পদ্ধতিঃ
একটি লাল পেঁয়াজ নিন। লাল পেঁয়াজে সালফারের পরিমাণ বেশি থাকে। তারপর পেঁয়াজটি কুচি করে কাটুন ও ভালো করে পাটায় থেঁতলে নিন। একটি নরম পাতলা কাপড়ে এই পেঁয়াজ রেখে চিপে রস বের করে নিন। তারপর এই পেঁয়াজের রস সরাসরি মাথার ত্বকে লাগান। ১৫ মিনিট রাখুন। তারপর মৃদু কোন শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২/৩ দিন ব্যবহারে ভালো ফল পাবেন। বাড়তি পাওনা হিসাবে দূর হবে খুশকি ও অন্যান্য সমস্যা।
মেঘ
মাছ ভাজতে গিয়ে অনেককেই বিপদে পড়তে হয়। ফ্রাই প্যানে মাছ দেয়ার সাথে সাথেই তেল ফুটে ছিটিয়ে যায় চারপাশে। গরম তেলের ছিটে পড়ে আপনার পোশাকে, মুখে ও হাতে। ব্যাপারটা ঠিক সমস্যাই নয়, বরং ভয়ানক বিপদজনক। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার আছে একটি সহজ উপায়। আর তার জন্য লাগবে একটুখানি লবণ।
মাছ ভাজতে গিয়ে তেল ছিটে উঠার বিড়ম্বনা এড়ানোর জন্য চুলায় মাছ দিয়েই কিছু লবণ ছিটিয়ে দিন তেলে। তাহলে মাছের তেল ছিটবে না একেবারেই। ঝামেলা ছাড়াই মাছ ভেজে নিতে পারবেন বেশ সহজে।
-মেঘ
যন্ত্রপাতি ছাড়া কি আমাদের একদিন ও চলে? ফ্রিজ ,ব্লেন্ডার মাইক্রো ওভেন, ডিশ ওয়াশার,মিক্সার আরো কত কী! এইসব যন্ত্র যেমন আমাদের খাটুনি কমিয়ে দিয়েছে তেমনি সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা করেছে সহজ। জীবনে এনেছে গতি।এছাড়াও রয়েছে কাঁচের ,সিরামিকের দামি বাসনকোসন। এসব যন্ত্রপাতি কিংবা তৈজসপত্র বার বার কেনা আমাদের জন্য বেশ ব্যয় সাপেক্ষ। তাই এদের ব্যবহার ও পরিষ্কার করার সময় নিতে হয় কিছু বাড়তি সর্তকতা। এসব কিছু নিয়েই আজকের আয়োজন।
(১) ওভেনের গায়ে উপচে পড়া তরকারির ঝোল, ভাতের মাড়, উপচে পড়া কেকের মিশ্রন ইত্যাদি পড়লে ওখানে দ্রুত লবণ ছিটিয়ে দিন। ওভেন ঠান্ডা হবার পর ভেজা স্পঞ্জ দিয়ে ঘষুন।
(২) চাল ধোয়া পানি না ফেলে দিয়ে সেই পানিতে কয়েক মিনিট গ্লাসগুলো ভিজিয়ে রাখুন। তারপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে শুকিয়ে দেখুন কতটা ঝকঝকে হয়ে ওঠে।
(৩) চিনা মাটি বা কাঁচের বাসনপত্র থেকে চা বা কফির দাগ তুলতে হলে কাপড়ে বেকিং সোডা দিয়ে ঘষুন।
ঘষার আগে চিনা মাটির পাত্রের নিচে একটা টাওয়েল বা কাপড় দিয়ে ঘষুন, যা কুশন হিসাবে কাজ করবে।
(৪) দা,ছুরি,বাটা-ঘষা অথবা কাটার যন্ত্র থেকে রসুন-পেঁয়াজ-মাংস-মাছের গন্ধ তাড়াতে চান? এইসব গন্ধ দূর করতে চুন বা লেবুর টুকরো দিয়ে ঘষুন। চাইলে বেকিং সোডা লাগিয়ে হালকাভাবে ঘষে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
(৫) কেটলির তলানির দাগ তুলতে সমপরিমাণ পানি ও ভিনেগার নিয়ে ফুটিয়ে সারারাত রেখে পরদিন ধুয়ে ফেলুন।
(৬) ব্লেন্ডারে হালকা গরম পানি দিয়ে এক ফোঁটা তরল ডিটারজেন্ট দিয়ে কয়েক সেকেন্ডের জন্য ব্লেন্ডারটি চালু করুন। ঢাকনা খুলে ঘষে পানি ফেলে শুকিয়ে নিন।
(৭) নন-স্টিক পাত্র বেশি ঘষাঘষি করলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কোনো কারণে এগুলোর গায়ে খাদ্যদ্রব্য আটকে গেলে গরম পানি ঢালুন। তাও না উঠলে অল্প পানিতে ভিনেগার ও বেকিং সোডা গুলিয়ে ঐ পাত্রটি গরম করুন। দাগ চলে গেলে সামান্য কুকিং অয়েল পাত্রে লাগিয়ে হালকা গরম করুন।
(৮) শুকনো মরিচ গ্রাইন্ডিং মেশিনে গুড়ো করার আগে ঠান্ডা করে নিন। এতে মরিচ গুঁড়ো করা হবে দ্রুত ও সহজ।
(৯) ফ্রিজের মধ্যে সব খাবার ঢেকে রাখবেন। এতে একটি স্বাদ ও গন্ধ অন্যটির মধ্যে চলে যাবার সম্ভাবনা কমে যাবে। ফ্রিজ গন্ধমুক্ত রাখতে এক টুকরো লেবু ফ্রিজে রেখে দিন, তবে কয়েকদিন পর পর লেবুর টুকরোটি পাল্টাতে ভুলবেন না। ফ্রিজে বাজে গন্ধ হবে না, থাকবে নতুনের মতই ফ্রেশ।
মেঘ
শীতকালে আমাদের সবার ত্বকই সাধারণত শুষ্কএবং মলিন হয়ে পড়ে। এমনকি দেখা যায়সারা বছর যাদের ত্বক তৈলাক্ত থাকে শীতকাল
আসলেই তা হয়ে পড়ে শুষ্ক এবং রুক্ষ। তাই এসময়
চাই ত্বকের ঠিকমতো যত্ন নেয়া। ত্বক যাতে সব
সময় ময়েশ্চারাইজড থাকে সেদিকে খেয়াল
রাখতে হবে। তাই আজ তেমনই কিছু ফেইস মাস্ক
দেয়া হল যা ত্বকের শুষ্কতা দূর করে ত্বকের
আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। আপনার
রূপচর্চার রুটিনে এই ফেইস প্যাক গুলো যোগ
করে শীতকালে সুরক্ষিত রাখুন নিজের ত্বককে।
১। কলার ফেইস প্যাকঃ
- একটি পাকা কলা নিন।
-এতে এক টেবিল চামচ মধু যোগ করুন।
- এর সাথে এক চা চামচ অলিভ অয়েল দিন।
সব উপকরণ একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।
এবার মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। মধু মুখের ময়েশ্চার ধরে রাখতে সাহায্য করে, অলিভ অয়েল ত্বকের
সিবাম প্রোডাকশন নিয়ন্ত্রণ করে ত্বকের কোমলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
২। মিল্ক ফেইস প্যাকঃ
- একটি বাটিতে এক চা চামচ দুধ নিন।
- এক চা চামচ আমনড পেস্ট করে এর সাথে মেশান।
- এক টেবিল চামচ মধু যোগ করুন।
- এর সাথে ১ চা চামচ এলোভেরা জেল নিন।
এবার সব উপকরণ একসাথে মিশিয়ে পেস্ট
তৈরি করুন।
মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রাখুন।এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
এই মাস্কটি ত্বকের মৃত কোষ দূর
করে ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে।
এছাড়াও এটি ত্বকের শুষ্কতা কমিয়ে ময়েশ্চার
বজায় রাখে এবং চেহারায় উজ্জ্বল ভাব নিয়ে আসে।
৩। কোকো ফেইস প্যাকঃ
- একটি বাটিতে আধা চা চামচ কোকো পাউডার
নিন।
- এর সাথে আধা চা চামচ মধু যোগ করুন।
- এক চা চামচ বেসন যোগ করুন।
সবকিছু একসাথে ভালো মতো মিশিয়ে নিন।
এই প্যাকটি মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট
রাখুন। এরপর মুখ ধুয়ে ফেলুন।
কোকোতে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট
এবং ক্লিনজিং প্রোপার্টিজ।
এটি ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়তে দেয় না। আর
বেসন ত্বক টানটান করে এবং ত্বকের নিস্তেজ
ভাব দূর করে ত্বকে আনে লাবন্যের ছোঁয়া।
৪। শশার ফেইস প্যাকঃ
-একটি শশা কেটে পেস্ট করে নিন। এবার এর
সাথে এক টেবিল চামচ চিনি যোগ করে ১০-১৫
মিনিটের জন্য ফ্রিজে রেখে দিন। ফ্রিজ
থেকে বের করে মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট
রাখুন। এরপর মুখ ধুয়ে ফেলুন। মুখ ধোওয়ায় সময়
একটু পানি দিয়ে প্রথমে হালকা করে ঘষবেন
যাতে চিনি স্ক্রাবের কাজ করে।
শশা মুখের দাগ দূর করতে বেশ কার্যকর। এছাড়াও
শশা মুখের ত্বক মসৃণ করে এবং মুখের ক্লান্তি ভাব দূর করে। আর চিনি স্ক্রাব
হিসিবে খুব ভালো একটি প্রাকৃতিক উপাদান।
৫। রোজ ফেইস প্যাকঃ
- ২/৩ চা চামচ ওটমিল নিন এবং এর সাথে পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।
- গোলাপ ফুলের পাপড়ি বেটে পেস্ট
করে ওটমিলের সাথে ভালো মত মিক্স করুন।
এই মাস্কটি মুখে লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট
রাখুন। এরপর মুখ ধুয়ে ফেলুন। ওটমিল মুখের
শুস্কতা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি ন্যাচারাল ক্লিনজার হিসেবে খুব
ভালো কাজ করে। আর গোলাপ ফুলের পাপড়িতে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট
এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টিস
যা ত্বককে ড্যামেজ এবং ব্রণের
সমস্যা থেকে রক্ষা করে।
উপরের মাস্ক গুলো সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহারের
চেষ্টা করুন। নিয়মিত ব্যবহারে আপনার ত্বকের
আর্দ্রতা বজায় থাকবে এবং ত্বক হয়ে উঠবে নরম
এবং সুন্দর।
মেঘ
ফুল দিয়ে তৈরি ফেস প্যাক ত্বকের জন্য খুবইভালো। কিছু কিছু ফুলআছে যেগুলোতে মূল্যবান তেল,নিউট্রিয়েণ্ট আছে আর এই তেল আমাদের
ত্বকের নরিশমেণ্টের জন্য জাদুর মত কাজ
করে। তবে ফুলে যাদের
এলার্জি আছে তারা এই
প্যাকগুলো ব্যবহার করবেন না।
কেনা ফুলের চেয়ে আপনার বাগানের
ফুল পেলে সবচেয়ে ভালো হয়। শীত তো প্রায় চলে এলো-এই সিজেনের জন্য
ফ্লাওয়ার ফেস প্যাক খুবই উপযোগী।
শীতে আমাদের অনেকের
ত্বকে কালচে ভাব চলে আসে কিন্তু এই প্যাক গুলো মুখে লাগিয়ে আপনি থাকবেন
দ্বীপ্তিময় ও উজ্জ্বল।
গোলাপ ফুল:
ফুলের রাণী গোলাপ দিয়েও
আপনি করতে পারে রূপচর্চা। শুষ্ক ত্বকের
যেকোনো বয়সী গোলাপের এই প্যাক
লাগাতে পারেন। গোলাপের পাপড়ির
সুগার আর তেল শুষ্ক
ত্বকে আর্দ্রতা জুগিয়ে ত্বককে কুসুম কোমল
করে তোলে।
কয়েকটি গোলাপ ফুলের
পাপড়ি নিন এর সাথে ২ / ৩ চা চামচ
ওটস আর দুধ মিশিয়ে ভালো করে ব্লে-
করে নিন। হয়ে গেল আপনার প্যাক।
এবার লাগানোর পালা। কটন
বলে গোলাপ জল লাগিয়ে পুরো মুখ
মুছে নিন তারপর অপেক্ষা করুন
শুকানো পর্যন্ত। এখন লাগান গোলাপের
ফেস প্যাক। ১০-১৫ মিনিট পর
পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক
নিয়মিত ব্যবহারে আপনি পেয়ে যাবেন
আপনার কাঙ্খিত উজ্জ্বল গ্লোয়িং স্কিন।
গাঁদা ফুল:
আজকাল গাঁদা ফুল সারা বছরই আমাদের
দেশে পাওয়া যায়। এই ফুল ত্বকের রঙ
হালকা করে সেই সঙ্গে ক্লিন করে।
সপ্তাহে একবার বা দুইবার এই প্যাক
ব্যবহারের ফলে ত্বকের পোরও টাইট হয়।
যদি কারও মুখে পিম্পল
থেকে থাকে গাঁদা ফুল তার অ্যান্টি-
সেপ্টিক, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল
প্রপারটির মাধ্যমে তাও
সারিয়ে তোলে। কয়েকটি ফুলের
পাপড়ির সাথে গুঁড়ো দুধ, টক দই, মধু ও
গ্রেটেড গাজর একসাথে পেস্ট
করে নিন। এই প্যাক ত্বকের ডালনেস দূর
করে। ব্রণে যাদের মুখ জর্জরিত
তারা সপ্তাহে ২ দিন করে এই প্যাক
ব্যবহার করুন।
বেলি ফুল:
বেলি ফুলের মাতাল করা গন্ধে ছোট বড়
আমরা সবাই বিমোহিত হয়ে থাকি।
যাদের শুষ্ক ত্বক তারা এই
প্যাকটি মুখে লাগাবেন সপ্তাহে ২
বার করে। দেখবেন ড্রাইনেস অনেকটাই
কেটে গেছে। ফুলের
বোঁটা থেকে পাপড়ি গুলো আলাদা করুন
, তারপর ফুটন্ত পানিতে ছেড়ে ৩-৫
মিনিট রাখুন।
পানি ছেঁকে নিয়ে দুধের মালাই এর
সাথে পেস্ট করে নিন। মসৃণ ত্বক পাওয়ার
জন্য প্যাকটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট
রাখুন। যাদের সেনসিটিভ ত্বক তারা টক
দই এর সাথে ব্লে- করে মুখে লাগান।
সপ্তাহে ১ বার করাই যথেষ্ট।
শাপলা ফুল:
যদিও এই ফুলটি আমাদের কাছে সহজলভ্য নয়
তবুও একেবারে যে পাওয়াই
যাবে না এমনটিও তো নয়। অনেক
গুলো মিনেরালের
সাথে শাপলাতে আছে লিনোলিক
এসিড, যা ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করতে বিশেষ
ভাবে উপযোগী। প্যাকটি বানানোও
খুব সহজ। ফুলের পাপড়ি গুলো খুব
ভালো করে ধুয়ে নিন। তারপর
পানিতে ৪ মিনিট সেদ্ধ
করে নিয়ে পেস্ট করে নিন।
সঙ্গে দিতে পারেন টক দই আর মধু।
চাইলে কিছু না মিশিয়েও শুধু ফুলের
পেস্ট লাগিয়েও উপকার পাবেন।
সেনসিটিভ ত্বক ছাড়া আর সবাই
নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন।
জবা ফুল:
শীতকালে মোটামুটি সবাই ব্রণের
সমস্যায় অতিষ্ঠ থাকি। কেননা ঘন ঘন
ক্রিম ব্যবহারের ফলে ত্বকের লোমকূপ
বন্ধ হয়ে যায় আর ধূলাবালির উপদ্রপ
তো আছেই। কিছু জবা ফুলের পাপড়ির
পেস্ট নিন এর সাথে চালের গুঁড়া,
এসেন্সিয়াল অয়েল যেমন ভিটামিন ই
আর অল্প পানি দিয়ে একটি প্যাক
বানিয়ে নিন। প্যাকটি মুখে লাগান
সব ধরনের টক্সিন, তেল
থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য।
গোলাপ বেলির সংমিশ্রণ:
অনেক সময় নরমাল বা মিশ্র ত্বক হঠাৎ
করে শুষ্ক হয়ে ওঠে এই প্যাকটি তাদের
জন্য বিশেষ ভাবে উপযোগী। এর
একটি কারণ হল এসিডিটি। আপনার
গ্রহণকৃত খাবার বা আবহাওয়াগত
কারণে ত্বক এসিডিক হয়ে যায়। এই সময়
ত্বক শুষ্ক এবং ডাল দেখায়। গোলাপ
বেলির মিশ্রণ ত্বকের এসিডিক নেচার
অনেকখানি কমিয়ে দেয়। এক
মুঠো গোলাপের পাপড়ি আর এক
মুঠো বেলি ফুল নিন, এর সাথে ফ্রেশ
কাঁচা দুধ মিশিয়ে হাত
দিয়ে কচলে নিন। এইবার
প্যাকটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর
ধুয়ে ফেলুন। প্যাকটি দেয়ার পর হাতের
তালুতে একটু গোলাপ জল
নিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন।
এইভাবে সপ্তাহে ৩ দিন করে ১ মাস
করুন।
এই ফুলগুলোর ভেতর যেসব প্রাকৃতিক
উপাদান আছে তা আমাদের রূপচর্চার জন্য
আশীর্বাদ স্বরূপ। তাই আর
দেরি না করে উপভোগ করুন ফুলের কুসুম
কুসুম স্পর্শ।
মেঘ