বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৩

ত্বকের জন্য প্রাকৃতিক পরিচর্যা

প্রতিদিনের সৌন্দর্য রক্ষার জন্য আমাদের নানা রকম প্রসাধনের সাহায্য নিতেই হয়। হতে পারে সেটা সাবান, ফেসওয়াশ, ক্রিম, পাউডার বা অন্য যেকোনো কিছু! কারণ খুব অল্প মানুষই সুন্দর ত্বক ও চুলের অধিকারী হয়। তার ওপর আছে ধুলা-ময়লা ও দূষণের প্রভাব। দূষণের প্রভাবেই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় ত্বক ও চুল। এছাড়াও রয়েছে মানসিক চাপ, টেনশন ইত্যাদি।

মানুষের শারীরিক সৌন্দর্য ও অন্তরের সৌন্দর্য অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। বাইরের সৌন্দর্য আমাদের গায়ের রঙে, মাথার চুলে, হাতে-পায়ের নখে। কিন্তু অন্তরের সৌন্দর্য একদম অন্যরকম একটি ব্যাপার। স্বাস্থ্য ও নিত্যদিনের পরিচর্যার ওপর নির্ভর করে সৌন্দর্য।

চুল বা ত্বককে সুন্দর করে তুলতে চাইলে প্রথমেই টেনশন বা মানসিক চাপ একবারে কমিয়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে ধ্যান বা মেডিটেশন করতে পারেন। মন ভালো রাখার চেষ্টা করুন, হাসিখুশি থাকুন। তেলযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। খাবারের তালিকায় টাটকা ফল, শাক ও সবজি রাখুন বেশি বেশি। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি খান। নিয়ম মেনে চলাই হলো অন্তর ও বহিঃ সৌন্দর্য রক্ষার চাবিকাঠি।

আয়ুর্বেদিক ত্বকের যত্নের রয়েছে বেশ কয়েকটি ধাপ। এর মধ্যে ক্লিনজিং, ম্যাসাজ, স্ক্রাবিং, টোনিং এবং ময়েশ্চারাইজিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিদিন নিয়মিত ত্বককে পরিষ্কার রাখা, টোনিং করা ও তার আর্দ্রতা বজায় রাখা জরুরি। দিনে অন্তত চার পাঁচবার মুখে পানির ঝাপটা দি্ন,পানি হল প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার । মুখে সাবান ব্যবহার করবেন না। মুখ ধোয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারেন বেসন। কাঁচা দুধের মধ্যে পাউরুটি ভিজিয়ে সেটা দিয়েও মুখ পরিষ্কার করতে পারেন। সাবানের ক্ষারজাতীয় পদার্থ ত্বকের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে ত্বককে করে তোলে শুষ্ক ও প্রাণহীন। সাবান যদি ব্যবহার করতেই হয় তাহলে চন্দনযুক্ত বা নিমযুক হারবাল সাবান ব্যবহার করুন। ত্বক পরিষ্কার করার পর অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন। এতে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে।

অ্যালোভেরা, মঞ্জিষ্ঠা, চন্দনের গুঁড়া, মুসুর ডালের গুঁড়া মিশিয়ে প্রাকৃতিক ক্লিনিং স্ক্রাব তৈরি করুন। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বকের জন্য এই স্ক্রাব ব্যবহার করুন। শুধু মুখে নয়, চাইলে সারা শরীরেও ব্যবহার করতে পারেন এই স্ক্রাব। ত্বকের ধরন শুষ্ক হলে স্ক্রাবের সাথে পানির বদলে ব্যবহার করুন দুধ বা দই। তৈলাক্ত ত্বক হলে স্ক্রাবের সাথে মেশান লেবুর রস ও গোলাপজল। যাঁদের ত্বক পরিণত এবং বলিরেখার ছাপ পড়েছে তাঁরা আমন্ড তেল ও পানি মিশিয়ে স্ক্রাব ব্যবহার করুন। স্ক্রাবের ব্যবহারে ত্বকের মৃত কোষ ও ব্ল্যাকহেডস দূর হয়। প্রতিদিন বাইরে থেকে ফিরে আতপ চালের গুঁড়া, মুসুর ডালের গুঁড়া, এক চিমটি কর্পূর আর গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। সারা মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রাখুন। এরপর হালকা করে ঘষে তুলে ফেলুন। ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিন।

ত্বককে পরিষ্কার করার পর প্রয়োজন হয় ম্যাসাজের। মুখে ম্যাসাজের সময় মনে রাখতে হবে কোনোমতেই যেন হাতেয আঙুল নিচের দিকে না নামে। ম্যাসাজে ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। ফলে ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তবে ভুল ভাবে ম্যাসাজ করলে ত্বকের ক্ষতিও হতে পারে।

ম্যাসাজের জন্য এসেনশিয়াল অয়েল খুবই কার্যকর। সাধারণ ত্বকের জন্য জোজোবা বা আমন্ড অয়েলের সাথে ল্যাভেন্ডার, জেরেনিয়াম বা জেসমিনের তেল মিশিয়ে ম্যাসাজ করতে পারেন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য জোজোবা অথবা সূর্যমুখী তেলের সাথে লেবু ও কয়েক ফোঁটা নিম বা চন্দনের তেল মিশিয়ে ম্যাসাজ করতে পারেন। শুষ্ক ত্বকের জন্য মধু ও জুঁই ফুলের তেল মিশিয়ে ম্যাসাজ করুন। ক্ষতিগ্রস্থ ত্বকের ক্ষেত্রে জোজোবা অয়েলের সাথে ল্যাভেন্ডার অয়েল, নিম তেল, চা গাছের তেল ও লেবুর তেল মিশিয়ে ম্যাসাজ করলে উপকার পাবেন।

ম্যাসাজের পর হারবাল স্টিম নিলে ত্বক হয় সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। দুই লিটার গরম পানিতে এক কাপ পরিমাণ উপাদান মিশিয়ে মুখে ভাপ নিন। ভাপ নেবার সময় তোয়ালে দিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন। সাধারণ বা মিশ্র ত্বকের জন্য গরম পানিতে চন্দনের গুঁড়া, তেজপাতা ও তুলসী পাতা দিন। তৈলাক্ত ত্বক হলে গরম পানিতে লেবুর খোসা, লবঙ্গ ও ইউক্যালিপটাসের তেল। শুষ্ক ত্বকের জন্য পানিত মিশান লবঙ্গের গুঁড়া, পুদিনা পাতা ও রোজ অয়েল।

স্টিম নেয়ার পর মুখে মাস্ক বা ফেসপ্যাক লাগানো জরুরি। মাস্ক বা বিউটিপ্যাক ত্বকের গভীরে ঢুকে থাকা ময়লা পরিষ্কার করে। ফলে ব্ল্যাকহেডস বা ব্রণের সমস্যা অনেকটাই দূর হয়।

মেঘ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন